ওয়াশিংটন-বেইজিং বাণিজ্যযুদ্ধে ক্ষতির পাল্লা ভারী যুক্তরাষ্ট্রের
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় থেকেই বৈরী। পাল্টা শুল্কারোপ আর নিষেধাজ্ঞার কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে দুই দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য।
মার্কিন ক্ষমতায় নতুন প্রেসিডন্টে জো বাইডেন এসেও রাতারাতি কোনোকিছুই বদলে দিতে পারেনি। মুনাফার চেয়ে শুল্কের হিসেবে জরিমানা বাড়ায় দেশ দুটির দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য কমেছে। একসময় চীনের বৃহত্তম রফতানির বাজার যুক্তরাষ্ট্র থাকলেও বিকল্প বাজার হিসেবে এখন ইউরোপ আর এশিয়াকে বেছে নিয়েছে চীন।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাণিজ্যিক সম্পর্কের অবনতিতে ক্ষতি বেশি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। দেশটির চেম্বার অব কমার্স বলছে, দুই দেশই যদি শুল্ক আরোপের প্রতিযোগিতা অব্যাহত রাখে, কিংবা এক দেশ আরেক দেশে যদি বিনিয়োগ বন্ধ করে দেয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের ফার্মগুলোর কোটি কোটি ডলার ক্ষতি হবে। ক্ষতির মুখে পড়বে পুরো মার্কিন অর্থনীতি। মার্কিন বিনিয়োগকারীরা যদি চীনে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ কমিয়ে দেয়, মার্কিন কোম্পানিগুলোর বার্ষিক আয় আড়াই হাজার কোটি ডলার কমে যাবে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগি দেশের বিনিয়োগকারীরা চীনে বিনিয়োগ বাড়াবে এবং লাভবান হবে। আর এতে যুক্তরাষ্ট্র হারাতে পারে মোট জিডিপির ৫০ হাজার কোটি ডলার। বিশ্বের দুই শীর্ষ অর্থনীতির দেশ যদি একে অন্যের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করে, তবে বিশ্ব বাণিজ্য ক্ষতির মুখে পড়বে। মার্কিন চেম্বার অব কমার্স বলছে, দুই অর্থনীতির দেশের পরস্পর বিরোধিতা অনেক বেশি লোকসান ডেকে আনবে।
দু্ই দেশের মধ্যে এখনও চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ। কোনো দেশই এখনও পণ্য আমদানি-রফতানিতে শুল্ক কমানো বা মওকুফের সিদ্ধান্ত নেয়নি। যদি সম্পর্কে আরও বৈরিতা আসে, যদি দুই দেশই শুল্কের পরিমাণ বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করে, তাহলে ২০২৫ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির বছরে ১৯ হাজার কোটি ডলারের লোকসান হবে।
যদি বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করে দুই দেশ, মানুষের যাতায়াত কমবে, শিক্ষা ও পর্যটন খাত থেকে রাজস্ব আয় কমবে। গবেষণা বলছে, চীনা পর্যটক আর শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে আসা বন্ধ করলে যুক্তরাষ্ট্রের বছরে দেড় হাজার থেকে ৩ হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত লোকসান হবে।
চীনের অ্যাভিয়েশন খাতে যুক্তরাষ্ট্র কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারলে বছরে ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার পর্যন্ত লোকসান গুনতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। ২০৩৮ সাল নাগাদ এ পরিমাণ দাঁড়াবে ৮৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। চীনের সেমিকন্ডাক্টারের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম না থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের ৫ হাজার ৪০০ থেকে ১২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের যন্ত্রাংশ রফতানি কমবে। ঝুঁকির মুখে পড়বে ১ লাখ মার্কিনির চাকরি। মেডিকেল ডিভাইসের বাজারে অংশগ্রহণ না থাকলে বার্ষিক লোকসান হবে ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার, এক দশকে এ লোকসান পৌঁছাবে ৪৭ হাজার ৯০০ কোটি ডলারে।
তাই বাণিজ্যিক সম্পর্কে বৈরিতা নিরসনে নতুন মার্কিন সরকারের সঙ্গে চীনের আলোচনায় আসা উচিত বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।